,

‘কর্তৃপক্ষের অবহেলায়’ ৫৮ শিক্ষার্থীর পড়ালেখা অনিশ্চিত

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৫৮ জন শিক্ষার্থী অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না। ফলে তাদের লেখাপড়ার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে ওইসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

বুধবার (১ জুন) বেলা সাড়ে ১১ টায় প্রেসক্লাব, গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগী ওইসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী ৬ষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী সারা হাচিনের পিতা মো. শহিদুল ইলাম খান।

এর আগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা প্রেসক্লাব গোপালগঞ্জের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্লেকার্ড বহন করতে দেখা যায়।

লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০২২ সালে শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেনীতে ৫৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ছয় মাস ক্লাস করার পর ২ জুন অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার ফির টাকা জমা দিতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাদের ফির টাকা গ্রহণ না করে তাদেরকে বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করে। পরীক্ষায় অংশগ্রহন ও বিদ্যালয়ে যেতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে তারা।

অপরদিকে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেন, ভর্তি রেজিস্ট্রারে নাম না ওঠা ও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাদেরকে পরীক্ষার অংশ গ্রহন করা থেকে বিরত রাখা ও বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করা হয়। অথচ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি কমিটির মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়াই তাদেরকে ভর্তি করে। ছয় মাস পাঠ দান করার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ তালবাহানা শুরু করেন।

তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে পর পর দুই বছর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পরিবর্তে লটারীর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে আসছে। ওই সময় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অপেক্ষামান তালিকা থেকে ১৩ জন এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সপ্তম শ্রেণিতে ১৮ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ১৬ জন ও নবম শ্রেণিতে ১১ শিক্ষার্থী ওই বিদ্যালয় ভর্তি হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সন্তানদের ভর্তি আবেদন ফরম প্রদান করে। আমরা তা পূরণ করে সরকারের আনুসঙ্গিকসহ নির্ধারিত ভর্তি ফি বাবদ ওই বিদ্যালয়ের হিসাব নং-সিএ-৩৩০০১৯৯৬-র অনুকুলে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ডিসি কমপ্লেক্স শাখা, ১হাজার ৮৫৫ টাকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জমা দিলে আমাদেরকে রশীদ প্রদান করে।

এরপর, জানুয়ারি ২০২২ সাল হতে অদ্যবদি আমাদের সন্তানরা নিয়মিত ক্লাস করে আসছে। এরমধ্যে বিদ্যালয় থেকে তাদের স্কুল ড্রেসের কাপড় ও বোর্ডের বই সরবরাহ করে। অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ এবং যোগ্যতানুযায়ী ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ, গান ও চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন বিষয়ে নাম সংগ্রহ করে।

গত ৫ এপ্রিল শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হুমায়রা আক্তার আকস্মিকভাবে বদলী হয়ে যান। তিনি ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি অনুমোদন করেন। এরই মধ্যে নতুন অধ্যক্ষ শাহানাজ্ রেজা এ্যানি নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর ওই শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে এবং ২ জুন ২০২২ থেকে বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে আমরা বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করলে আমাদেরকে জানানো হয় সাবেক অধ্যক্ষ ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১৩ শিক্ষার্থীসহ ৫৮ জনের ভর্তি রেজিস্ট্রারে নাম তুলে না যাওয়ায় এ জটিলটার সৃষ্টি হয়েছে। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা তাদের পরীক্ষার ফি গ্রহন করছি না।

ভূক্তভোগী সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সারিকা সাহেদ রেজার মা জাকিয়া রশীদ ইলা বলেন, ‘বছরের অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে। এখন আমার সন্তানকে কোথায় নিয়ে ভর্তি করবো। এই বিদ্যারয়ের সিলেবাস অনুযায়ী সে লেখাপড়া করেছে এবং এই বিদ্যালয়ে তার সহপাঠিদের সাথে মেলামেশা করেছে। শিক্ষকেরা তাকে বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করলে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে এবং লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। যদি তখন ভর্তি কমিটি আমার সন্তানকে ভর্তি না করতো তাহলে আমরা অন্যত্রে ভর্তি করতাম। ভর্তির সময় ভর্তি কমিটি ও অধ্যক্ষের অনুমোদন ছিল। এখন কেন তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।’

৬ষ্ঠ শ্রেণির ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হুমায়ারা কবীর আয়েশা বলেন, ‘আমাদের ভর্তি পরীক্ষা হয়নিঅ লটারীর মাধ্যমে আমি এই বিদ্যালয়ে অপেক্ষমান তালিকার ছিলাম। বিদ্যালয়ে আবেদন করলে আমাকে ভর্তি করে নেয়। আমার কয়েকজন সহপাঠি তারা অপেক্ষমান তালিকায় না থেকেও পরীক্ষা দিতে পারছে। তাহলে আমি কেন পারবো না?

অধ্যক্ষ শাহানাজ্ রেজা এ্যানি বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। সাবেক অধ্যক্ষ ভর্তি রেজিষ্ট্রারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নাম লিপিবদ্ধ করে যাননি। এখানে আমি শিক্ষার্থীদের কোন ত্রæটি দেখছি না। ভর্তি কমিটির এই দায় এড়াতে পারেন না। জেলা প্রশাসকে এ বিষয়ে আমাকে কোন কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যদি কিছু জানার থাকে তার কাছ থেকে জানতে পারবেন ।

সাবেক অধ্যক্ষ হুমায়ারা আক্তার বলেন, ‘৫৮ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি টাকা নিতে নিষেধ করলেও কতিপয় শিক্ষক ও কর্মচারির যোগসাজসে এই কাজ হয়েছে। আমি এটির তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম বদলীজনিত কারণে বিষয়টি নিয়ে আর এগোতে পারিনি ।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘যে ৫৮ শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিলের কথা বলা হচ্ছে তারা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নয়। বিদ্যালয়ে তাদের কোন কাগজপত্র জমা নেই হাজিরা খাতায় নাম নেই। তারা অবৈধভাবে বিদ্যালয়ে ক্লাস করছিল। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

-লিয়াকত হোসেন লিংকন

এই বিভাগের আরও খবর